শিরোনাম দেখে সম্মানিত পাঠকবৃন্দের মনে নানা ধরনের প্রশ্নের উদ্রেক হতে পারে। এ আবার কেমন কথা, জলবায়ুর পরিবর্তনজনিত ক্ষতিতে পানিতে ভাসমান মশা মাছির আবাসস্থল এ কচুরিপানা কি অবদান রাখতে পারে? হ্যাঁ, জলবায়ুর ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবিলায় কচুরিপানা বিশেষ বিশেষ অবদান রাখতে পারে। বিশ্বের প্রায় সব উন্নত দেশগুলো তাদের প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবহার করে। উন্নত বিশ্বে প্রাকৃতিক সম্পদকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠছে, “Natural Resource Utilization Group” এবং ÒNatural Resource Research Institute” নামে অনেক প্রতিষ্ঠান। কিন্তু কৃষি প্রধান বাংলাদেশে প্রাকৃতিক সম্পদ এর গুরুত্ব অনেক ক্ষেত্রে অজানা ও অবহেলিত। কচুরিপানা এমন একটি প্রাকৃতিক সম্পদ যা ব্যবহারের মাধ্যমে এর গুরুত্ব অনুধাবন করা যায়।
জলবায়ু পরিবর্তন এখন বাংলাদেশের একটি নির্মম বাস্তবতা। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। বাড়ছে ভারি ও অনিয়মিত বৃষ্টিপাতের পরিমাণ। গলছে হিমালয়ের বরফ। বাড়ছে সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা। এ সব কারণে সবচেয়ে মারাত্মক আঘাত আসছে বাংলাদেশের কৃষি খাতের উপর। যদিও বর্তমানে মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) কৃষি খাতের অবদান হচ্ছে ১৪.২২ শতাংশ। কিন্তু তা সত্ত্বেও দেশের প্রায় ৬০ ভাগ মানুষ কৃষির উপর নির্ভরশীল। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়ে এবং বৃষ্টিপাতের ধারা পরিবর্তন হয়ে দেশে ঘন ঘন জলোচ্ছ্বাস, ঘূর্ণিঝড় ও বন্যার সৃষ্টি হচ্ছে। উপকূলীয় অঞ্চলে লবণাক্ততার পরিমাণ বেড়ে গেছে। দেখা দিচ্ছে তীব্র খরা। যা দেশে কৃষি উৎপাদনের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। এবার আমন মৌসুমে অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের কারণে ২/৩ বার ধানের চারা রোপণ করেও কূলকিনারা পাচ্ছে না কৃষক। ইন্টারগভর্নমেন্টাল প্যানেল অব ক্লাইমেট চেঞ্জ’র (আইপিসিসি) হিসাব অনুযায়ী, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আগামী ২০৫০ সাল নাগাদ বাংলাদেশের ধান উৎপাদন ৩২ শতাংশ এবং গম উৎপাদন আট শতাংশ হ্রাস পাবে।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বৈশ্বিক গড় উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশের সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বেশি পরিমাণে বাড়ছে। এতে লবণাক্ততা বৃদ্ধি পেয়ে কৃষি জমি কমে যাচ্ছে। বাংলাদেশ সেন্টার ফর অ্যাডভান্স স্টাডিজের গবেষণায় দেখা গেছে, গত ৩৬ বছরে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে লবণাক্তার পরিমাণ বেড়েছে প্রায় ২৭ শতাংশ। ১৯৭৩ সালে যেখানে লবণাক্ত জমির পরিমাণ ছিল সাত লাখ ৫০ হাজার ৩৫০ হেক্টর, ২০০৯ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ লাখ ৫০ হাজার ৭৮০ হেক্টর। আশংকা করা হচ্ছে আগামী ২০৫০ সাল নাগাদ বাংলাদেশের তাপমাত্রা ১.৫ থেকে ২.০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পাবে। এতে বৃষ্টি পাতের পরিমাণ ১০ থেকে ১৫ শতাংশ বেড়ে যাবে। এই অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত কৃষি উৎপাদনের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এটা এতই স্পষ্ট যে, উত্তাপ বৃদ্ধির মূল কারণ শিল্প বিপ্লব এবং এজন্য দায়ী উন্নত দেশগুলো। এভাবে তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে বরফ গলে পানিতে সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ছে। এটাই জলবায়ু পরিবর্তন। আর এই জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ একটি ব-দ্বীপ এবং প্লাবন ভূমি। তাই উষ্ণতা বৃদ্ধি পেলে সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পাবে এবং তাতে বাংলাদেশের ব্যাপক ক্ষতি হবে। বিশ্ব ব্যাংকের এক সমীক্ষায় বলা হয়েছে, ২১০০ সালে সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা এক মিটার বৃদ্ধি পাবে। এতে বাংলাদেশের ভূ-ভাগের সাড়ে ১৭ শতাংশ এলাকা লোনা পানিতে তলিয়ে যাবে। এর ফলে প্রায় চার কোটি মানুষ পরিবেশগত দুর্যোগে উদ্বাস্তুতে পরিণত হবে। দেশে ভিতর এদের পুনর্বাসনের মতো জায়গা থাকবে না। কারণ উঁচু এলাকাগুলোতে এত বিপুল সংখ্যক মানুষকে স্থান দেয়ার মতো জায়গা নেই। তত্ত্ব ও সূত্র যাই বলুক না কেনো জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে বাংলাদেশের কৃষি ব্যবস্থা। ক্ষতির এই আশঙ্কা থেকে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মহাজোট সরকারের দায়িত্ব নিয়েই জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবিলায় ২০০৯-১০ অর্থবছরে নিজস্ব অর্থায়নে গঠন করেন ‘জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড’। এ সাহসিকতা ও যুগোপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ করার কারণে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘের পরিবেশ বিষয়ক সর্বোচ্চ সম্মাননা ‘চ্যাম্পিয়ন্স অব দ্য আর্থ’ পুরস্কার পেয়ে দেশ ও জাতিকে ধন্য করেছেন। বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশ সম্মানিত হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনে কৃষির অভিযোজিতা নিয়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠন, সরকারি-বেসরকারি সংস্থা নানা আয়োজনে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করে কাজ করে যাচ্ছেন। আমি একজন কৃষি গবেষক হিসাবে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিযোজিতায় কিভাবে কচুরিপানাকে কাজে লাগানো যায় সে ব্যাপারে সংক্ষিপ্ত বিবরণ তুলে ধরছি-
তাপমাত্রা বৃদ্ধির প্রভাব কমাতে কচুরিপানার ব্যবহার জলবায়ু পরিবর্তনের একটি প্রধান উপসর্গ হলো তাপমাত্রা বৃদ্ধি। বিংশ শতকের প্রথম দিকে বায়ুম-লে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের মাত্রা ছিল ২৮০ পিপিএম এবং বর্তমানে তা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৩৮০ পিপিএম। কার্বন-ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ বৃদ্ধির ফলে বিগত শতকে পৃথিবীর গড় উত্তাপ বৃদ্ধি পেয়েছে ১০০ সেন্টিগ্রেড। যদি অব্যাহতভাবে গ্রিন হাউস গ্যাসের নিঃসরণ বাড়তেই থাকে তবে বিজ্ঞানীদের ধারণা আগামী ২০৫০ সাল নাগাদ তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাবে ১.৫০-৩০ সেন্টিগ্রেড। এতে খরা, বন্যা, ঘূর্ণিঝড়সহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দেবে। বিপন্ন হবে প্রাকৃতিক পরিবেশ। বায়ু, পানি, মাটি, বৃক্ষ ও প্রাণী- এই পাঁচটি হলো প্রাকৃতিক পরিবেশের মৌলিক উপাদান। এরা পরস্পর সম্পর্কযুক্ত ও নির্ভরশীল হয়ে পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখে। তাপ প্রবাহের কারণে মাটির আদ্রতা দ্রুত বাষ্পীভূত হয়ে মাটি পানি শূন্য হয়ে পড়ে এবং অন্যদিকে মাটিতে বিদ্যমান পানির স্তর নিচে নেমে যায়। মাটিতে প্রয়োজনীয় রসের অভাবে গাছ মাটি থেকে খাদ্য উপাদানসমূহকে গ্রহণ করতে পারে না। ডালপালার বিস্তার না ঘটাতে সালোক সংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় বিঘœ ঘটে। শিকড়ের প্রবৃদ্ধি থেমে যায়। ফলে মাঠ ফসল, ফল বাগান, সারিতে লাগানো গাছপালা সমূহের উৎপাদন কমে যায়। এই তাপ প্রবাহ থেকে গাছপালা ও মাঠের ফসল রক্ষা করতে হলে কচুরিপানাকে মালচ্্ বা জাবড়া হিসাবে ব্যবহার করুন। কচুরিপানা প্রকৃতির দান, সর্বত্রই বিস্তৃত। কিনতে হয় না, শুধু সংগ্রহ করে গাছের গোড়ায় দিবেন। কচুরিপানার কা-ের ভিতর ফোমের মতো অসংখ্য ঝালিকা কোষ বিদ্যমান। এরা দিনের বেলায় শুকিয়ে মচমচ হয়ে থাকে। রাতে কুয়াশা থেকে শিশির গুড়ি গ্রহণ করে পানিসিক্ত হয়। বাংলাদেশে নভেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হয় না বল্লেই চলে। কাজেই এ সময়টাতে কচুরিপানাকে বাড়ির সমস্ত গাছপালা এমনকি বাগানসমূহে মালচ্্ বা জাবড়া হিসাবে ব্যবহার করে জলবায়ুর পরিবর্তনগত প্রভাব তাপদাহ থেকে রক্ষা করুন, ফসল উৎপাদনের ধারা অব্যাহত রাখুন।
অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতে মাটির ক্ষয়রোধে কচুরিপানার ব্যবহার জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে কখনো অতিবৃষ্টি, কখনো অনাবৃষ্টি। ঋতুকাল বর্ষা এখন আর নিয়ম মেনে চলে না। তবুও মে মাস থেকে অক্টোবর পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হতে থাকে। বাংলাদেশ সেন্টার ফর অ্যাডভান্স স্টাডিজের গবেষণায় দেখা গেছে, বৃষ্টিপাতের কারণে মাটির উপরিস্তর থেকে মাটি ক্ষয় হয়ে প্রতি বছর ২.৪ বিলিয়ন টন পলি নদী, নালা, খাল, বিল, সাগরে পতিত হয়ে পানির স্তরকে উপরের দিকে ঠেলে দিচ্ছে আর অন্যদিকে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বৃষ্টির তীব্রতা মাটি কণাকে বিচ্ছুরিত করে মাটির গঠনকে আলগা করে ফেলে। এভাবে মাটি ক্ষয় প্রক্রিয়াটি তরান্বিত হয়। এ অবস্থায় বৃষ্টি শুরুর পূর্বেই কচুরিপানা দ্বারা গাছের গোড়ার চতুর্দিকে উঁচু করে মালচ্্ বা জাবড়া প্রয়োগ করা হলে বৃষ্টির তীব্রতা সরাসরি মাটিকে আঘাত করতে পারে না। ফলে মাটি ক্ষয়রোধ করা সম্ভব হয়। অন্যদিকে এই কচুরিপানা সময়ের ব্যবধানে পচে মাটিতে জৈব পদার্থ যুক্ত করে মাটিকে সমৃদ্ধ করে।
তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে মাটিতে জৈব পদার্থের পরিমাণ হ্রাস রোধে কচুরিপানার ব্যবহার ঃ বিশিষ্ট মৃত্তিকা বিজ্ঞানী ব্রাকম্যান ব্রেডির মতে, মাটির তাপমাত্রা ৩৪০-৩৮০ সেন্টিগ্রেড হলে মৃত্তিকাস্থ অণুজীব মারা যায়, জৈব পদার্থ দ্রুত বিযোজিত হয়ে কার্বনের পরিমাণ বৃদ্ধি করে, গাছের খাদ্যোপাদানগুলো মাটিতে রসের অভাবে মাটির সাথে ফিক্সড হয়ে যায়। এতে মাটি অনুর্বর হয়ে ফসল উৎপাদনে বিঘœতা সৃষ্টি করে। অথচ এই জৈব পদার্থকে বলা হয় মাটির প্রাণ। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের একমাত্র পথ হলো মাটিতে ভার্মি কম্পোস্ট (কেঁচো সার) জৈব সার প্রয়োগ করা। ভার্মি কম্পোস্ট (কেঁচো সার) জৈব সার তৈরির প্রাথমিক উপাদান হলো প্রকৃতি প্রদত্ত চির অবহেলিত কচুরিপানা। কচুরিপানা কেঁচো উৎপাদন বৃদ্ধিতেও সহায়ক। কচুরিপানার বৃদ্ধি এতটাই তাৎক্ষণিক যে, কোনো জলাশয়ের উপরে কার্পেটের মতো স্তর তৈরি করাটা মাত্র একদিনের ব্যাপার। হেক্টর প্রতি প্রতিদিন এদের বৃদ্ধি প্রায় ১৭ টনের উপরে এবং এক সপ্তাহের মধ্যেই এদের সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যায়। কচুরিপানায় খুব দ্রুত ও প্রচুর পরিমাণে ফুল ফোটে। তাই কচুরিপানা এখন কৃষির এক মহাসম্পদ। সম্প্রতি ভার্মিকম্পোস্ট (কেচোঁসার) তৈরির মাধ্যম হিসেবে কচুরিপানা একটি উত্তম উপকরণ হিসেবে নানা দেশে প্রমাণিত হয়েছে। কচুরিপানা এদেশে আগাছা এবং সর্বত্রই জলাভূমিতে দেখা যায়। কচুরিপানা থেকে তৈরি করা জৈব সার ব্যবহার করে জমির উর্বরতা এবং ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধির সাফল্য পাওয়া গেছে । ১৮০ টন কাঁচা কচুরিপানা থেকে প্রায় ৬০ টন জৈব সার উৎপাদিত হতে পারে। আমাদের দেশে দিন দিন গোবরের প্রাপ্যতা কমে আসছে, কারণ এখন আর কৃষকের গোয়ালে গরু নেই, আছে পাওয়ার টিলার। কচুরিপানা প্রাকৃতিকভাবে পানি থেকে বেশ ভালোভাবেই নাইট্রোজেন, ফসফরাস ও পটাসিয়াম পুষ্টি উপাদান পরিশোষণ করতে পারে। ফলে কচুরিপানা পচিয়ে জৈবসার তৈরি করে জমিতে ব্যবহার করলে এ সব উপাদান মাটিকে সমৃদ্ধ করে তোলে। ভারতের তামিলনাড়–র গবেষক সেলভারাজ এক পরীক্ষায় প্রমাণ পেয়েছেন, ভার্মিকম্পোস্টের জন্য যেখানে অন্যান্য কৃষিবর্জ্য থেকে জৈব সার তৈরি করতে ৭০ দিন সময় লাগে সেক্ষেত্রে কচুরিপানা থেকে জৈব সার তৈরি করতে সময় লাগে মাত্র ৫৫ দিন। উক্ত বিজ্ঞানীর মতে, বিভিন্ন উদ্যান ফসল চাষের জন্য যেখানে হেক্টরপ্রতি ১০-১৫ টন জৈব সার লাগে সেখানে কচুরিপানা থেকে তৈরি করা জৈব সার লাগে মাত্র ২.৫-৩.০ টন, এ পরিমাণ জৈব সার ব্যবহার করেই ফলন ২৫-৩০ শতাংশ বাড়ানো সম্ভব। জলবায়ুগত দিক বিবেচনায় অন্যান্য প্রথাগত জৈব সার থেকে যেখানে শতকরা ৭০ ভাগ মিথেন গ্যাস উৎপন্ন হয়, সেখানে ভার্মি কম্পোস্ট (কেঁচো সার) জৈব সার থেকে উৎপন্ন হয় মাত্র শতকরা ৩০-৩৫ ভাগ। কাজেই একথা নিঃসন্দেহে বলা যায়, ভার্মি কম্পোস্ট (কেঁচো সার) জৈব সার অধিক পরিবেশবান্ধব।
জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে সবজি চারা সস্তা কৌশলে তৈরিতে কচুরিপানার ব্যবহার অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের কারণে যেখানে সবজির বীজতলা করা কঠিন হয়ে পড়ে সেখানে কচুরিপানা পচা বা শিকড়ের অংশ ব্যবহার করে ঘরের চালার নিচে পলিব্যাগে বা ছোট ছোট পুটলি আকারে লাউ, কুমড়া, করলা, চিচিংগা,পুঁইশাক ও শশিন্দা জাতীয় সবজির চারা অনায়াসে তৈরি করা যায়।
জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিঘাত মোকাবিলায় ভাসমান কৃষিতে কচুরিপানার ব্যবহার ঃ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে পানি আর পানি অথই পানি। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের কারণে লাখ লাখ হেক্টর জমি জলাবদ্ধ হয়ে পড়ে সারা দেশে। পানিবন্দি এলাকার মানুষের বাঁচতে শেখার মন্ত্রে অনুপ্রাণিত হয়ে এক আশাজাগানিয়ার বাস্তব গল্প হলো ভাসমান চাষাবাদ পদ্ধতি। ভাসমান বেড বা ধাপ তৈরিতে ভাসমান কচুরিপানা সংগ্রহ করে প্রায় ১৫০ ফুট বেড তৈরি করা হয়। কাজেই প্রতিকূল পরিবেশে কৃষকদের ব্যতিক্রমী ও সৃজনশীল উদ্ভাবনী উদ্যোগে কচুরিপানাকে ব্যবহার করে ভাসমান কৃষি জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিঘাত মোকাবিলায় হতে পারে এক আলোকবর্তিকা। আশার কথা, ইতোমধ্যে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট ‘ভাসমান কৃষি’ কর্মকা-ের উপর গবেষণা কার্যক্রম শুরু করেছে।
অবিরাম বর্ষণে গো খাদ্যের জোগানদাতা ঃ অবিরাম বর্ষণে মাঠ ঘাট যখন পানিতে ডুবে যায়, তখন পানির ওপর ভেসে থাকে প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট সবুজ বর্ণের সমারোহে কচি কচি ডগায় সুশোভিত কচুরিপানা। কৃষক ভাইয়েরা গো খাদ্যের তীব্র সংকটে দিক বিদিক ছোটাছুটি করে। সে সময় কচুরিপানা গো খাদ্যের বিপদকালীন উৎসে পরিণত হয়।
দক্ষিণাঞ্চলের লবণাক্ত এলাকায় এ কচুরিপানাকে শুকিয়ে মালচ হিসাবে ব্যবহার করে লবণাক্ততা কমিয়ে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি করা সম্ভব। কচুরিপানার এত কৃষিতাত্ত্বিক গুরুত্ব থাকার পরও বাংলার কৃষক ভাইয়েরা কচুরিপানার ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। তাই পরিশেষে বলব, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিঘাত মোকাবিলায় কৃষক ভাইয়েরা সংগঠিত হয়ে দলবদ্ধভাবে কচুরিপানা সংগ্রহ করে জৈব সার তৈরি, মাল্্চ হিসাবে ব্যবহার, ফল গাছের গোড়ায় মাল্্চ হিসেবে ব্যবহার করে মাটির ক্ষয়রোধ করে মাটিতে জৈব সার সংযুক্ত করে এবং শুকনো কচুরিপানা জ্বালানি হিসাবে ব্যবহার করার পর যে ছাই তৈরি হবে তা লবণাক্ত অঞ্চলের মাটিতে প্রয়োগ করলে লবণাক্ততার প্রধান উপাদান সোডিয়ামকে ছাইতে থাকা পটাশিয়াস রিপ্লেস করে অর্থাৎ এ সকল পদ্ধতি অনুসরণ করে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি করে দেশকে সমৃদ্ধ করতে পারেন।
ড. মুহাম্মদ মহীউদ্দীন চৌধুরী
প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, বিএআরআই, নোয়াখালী, মোবা : ০১৮২৭-৮৬৫৮৬০, Psoofrdbari@gmail.com